নির্ভেজাল আনন্দের প্রতীক কেওক্রাডোং

প্রকাশঃ মার্চ ৮, ২০১৫ সময়ঃ ৪:২৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

IMG_0452editededitedদুপুর গড়িয়ে বিকেলের আভা দেখা দিতে শুরু করেছে চারিদিকে। পাহাড়গুলো নীলচে একটা আভা ধারণ করেছে। দলের সবাই মিলে একটা পাহাড়ের চুড়ার একটু নিচে দাঁড়িয়ে পড়লাম। দৃষ্টিসীমার একপাশে উড়ন্ত মেঘগুলো পাহাড়ের চুড়ায় এসে আছড়ে আছড়ে পড়ছিল। অন্যপাশে অস্তগামী সূর্যের শেষ আলোকচ্ছটা এসে পড়েছে পাহাড়ের গায়ে আর মেঘের ওপর। সে সৌন্দর্য্যকে ভাষায় প্রকাশ করার কোনো শব্দ আমার কাছে নেই। আবার মনে হলো, কত সুন্দর এই দেশ, কতকিছু দেখার বাকি, বাকি কতকিছু আবিস্কারের। উঁচু উঁচু পাহাড় আর সূর্যের শেষ আলোয় ঝলসে উঠা মেঘগুলো নিচের দিকে ফেলে আমরা তখনো উর্ধ্বগামী।

দার্জিলিং পাড়া থেকেই দেখা গেল কেওক্রাডং এর চুড়া। স্থানীয় লোকজন বললো, আমরা কাছাকাছি এসে গেছি। কেওক্রাডং এর একদম পায়ের কাছেই এই দার্জিলিং পাড়া। কিন্তু গত দুই দিনের অভিজ্ঞতা বলে, এসব কথা বিশ্বাস করা কোন কারণ নেই। পাহাড়কে যত কাছে দেখা যায় আসলে তা ততটাই দুরে। আর এখানকার আদিবাসীরা যেখানে যেতে ১ ঘণ্টার কথা বলে সেখানে যেতে আমাদের লাগে ৩ ঘণ্টার মতো। তারা বলে, এই তো কাছেই।

আর আমাদের কাছে সে পথ শেষই হতে চায় না। পরে, আমরা বুঝতে পেরেছি বেশিরভাগ আদিবাসীর কাছেই ঘড়ি থাকে না তাই অনুমান নির্ভর সময়ের কথা বলে তারা। দার্জিলিং পাড়ায় ১০/১৫ মিনিটি বিশ্রাম নিয়ে দেখা যাওয়া সেই কেওক্রাডং এর চুড়ার দিকে ওঠা শুরু করলাম। সূর্য্য তখন খুব দ্রুত গতিতে পাহাড়ের আড়ালে চলে যাচ্ছে, রেখে যাচ্ছে তার আভা। সে আভায় নীলচে আর সোনালী আভায় বর্ণিল হয়ে উঠছে দিগন্তরেখা।

কাছাকছি এসে গেছি, বিজয়ের আনন্দ হৃদয়কে স্পর্শ করতে শুরু করেছে। আর একটু, আর একটু। এসে গেছি প্রায়। হঠাৎ একটা পাকা সিড়ি দেখে অবাক হলাম। এটাই কেওক্রাডং এর চুড়ায় ওঠার সর্বশেষ প্রক্রিয়া। হাতে গোনা ২৫/৩০ টি ধাপ পেরোলেই যেখানে পৌঁছাবো সেটাই কেওক্রাডং এর চুড়া। এর আগে কত রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষ এই জায়গাটা স্পর্শ করে বিজয়ের আনন্দ পেয়েছে! কত মানুষ নিজেকে সবার ওপরে ভেবেছে! সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা তখন।

New-Image-bg20120113105902সেই কেওক্রাডং এর চুড়ায় আমি। সমুদ্র সমতল থেকে ৩২০০ ফিট ওপরে। ততক্ষণে, অন্ধকার নেমে এসেছে কিন্তু সে চুড়া থেকে চারিদিকে তাকিয়ে মনে হলো, একটা মেঘের রাজ্যে একখণ্ড মাটির ওপর ভাসছি। মনে হলো, কেওক্রাডং বিজয়ের জন্য আমাদের শুভেচ্ছা জানাতেই বুঝি মেঘের ভেলা ভাসানো হয়েছে চারিদিকে। কেওক্রাডোং, সুমদ্রপিষ্ট থেকে ৩১৭২(মতান্তরে ৩২৭২) ফুট উচ্চতায় অফিসিয়ালি দেশের সর্বোচ্চ শিখর ।

চূড়ার কয়েকফুট নিচেই আমাদের কাঠের কটেজ। এইরকম পাহাড়ি কাঠের বাড়িতে থাকার ইচ্ছা দীর্ঘদিনের, লাল মুন থান লালার মালিকানাধীন কটেজগুলো দেখেই তাই সকল ক্লান্তি দূর হয়ে গেল । সন্ধ্যার পর পরই পাহাড়ে শীত নামতে শুরু করে, চূড়ায় আগুন জ্বালিয়ে শুরু হয়ে যায় আমাদের আড্ডাও, আমরা ছাড়া তখন কেওক্রাডং অবস্থান করছে আরেকটি অভিযাত্রী দল , এমনিতে এই সময়টায় ট্রাকিং করে খুব বেশি মানুষ ওখানে ওঠে না , যারা উঠে বেশিরভাগই ছেলে, আমাদের দলেই শুধু ৪জন মেয়ে আছে।

দীর্ঘরাত অবধি নির্ভেজাল আনন্দের ভরিয়ে তুলেছে কেওক্রাডোং’র চূড়া। বিশেষ করে অনেকগুলো পাহাড়ি ভাষায় বেলাল ভাই’র গান, সোহেল, কাজি, রাজিব রাসেলদের উম্মাথাল নৃত্য আর বিনয় ভদ্রের স্বভাবসুলভ বাকপটুতায় মত্ত ছিলো সবাই। এর মধ্যে এক রোহিঙ্গা, অপর অভিযাত্রী দলের গাইড হিসেবে এসে বিচিত্র কথাবার্তায় ইসলাম প্রচারের বিরক্তি শুরু করলে বিনয় ভদ্র দ্বারা ব্যাপক সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্টের শিকার হয় এবং একপর্যায়ে সেও গান গাওয়া শুরু করে ! কেওক্রাডং’র চূড়া হয়তবা অনেকদিন মনে রাখবে এই মাতাল রাত।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G